যদি আপনি আলোতে থাকা অবস্থায় একটি চোখ বন্ধ করে রাখেন।

যদি আপনি আলোতে থাকা অবস্থায় একটি চোখ বন্ধ করে রাখেন এবং কিছুক্ষণ পর সেই চোখটি অন্ধকারে গিয়ে খুলেন, অন্ধকারে আপনি সবকিছু স্পষ্ট দেখতে পাবেন। এ ধারণা আসলে মানব শরীরের অভিযোজন ক্ষমতার সাথে সম্পর্কিত।

মানুষের চোখ আলো এবং অন্ধকার উভয় অবস্থাতেই দেখতে সক্ষম। তবে চোখের রেটিনা অন্ধকারের সাথে খাপ খাওয়াতে কিছুটা সময় নেয়। যখন আপনি দীর্ঘক্ষণ আলোতে থাকেন, তখন চোখের রেটিনা আলোতে অভ্যস্ত হয়ে যায় এবং হঠাৎ অন্ধকারে গেলে সবকিছু দেখার জন্য সময় নেয়। কিন্তু যদি আপনি একটি চোখ বন্ধ করে রাখেন, তাহলে সেই চোখটি আলোতে অভ্যস্ত হয় না। ফলে যখন আপনি অন্ধকারে যান এবং সেই চোখটি খোলেন, তখন অন্ধকারেও আপনি স্পষ্ট দেখতে সক্ষম হন।


এ কারণে অতীতে ডাকাতরা একটি চোখে আই প্যাচ পরিধান করতেন। তারা যখন আলো থেকে অন্ধকারে প্রবেশ করতেন, তখন আই প্যাচটি সরিয়ে ফেলে সেই চোখটি ব্যবহার করতেন, যা অন্ধকারে অভিযোজিত হয়ে থাকতো। ফলে তারা অন্ধকারেও কার্যক্রম চালাতে সক্ষম হতেন।


এই কৌশলটি শুধুমাত্র ডাকাতদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং জাহাজের নাবিকরাও এটি ব্যবহার করতেন। তারা জাহাজের ডেকে আলোর মধ্যে কাজ করার পর যখন নীচের ডেকে অন্ধকারে নামতেন, তখন এই পদ্ধতির সাহায্যে দ্রুত অন্ধকারে অভ্যস্ত হয়ে যেতেন। 


আজকের দিনে, যদিও এই কৌশলটি তেমন ব্যবহৃত হয় না, তবুও এটি প্রমাণ করে যে মানব দেহ কতটা চমকপ্রদ এবং অভিযোজন ক্ষমতাসম্পন্ন।

এই কৌশলটির পেছনে থাকা বিজ্ঞান সম্পর্কে একটু গভীরে আলোচনা করা যাক। যখন আপনি আলোতে থাকেন, তখন আপনার চোখের রেটিনাতে থাকা কোষগুলো, বিশেষ করে কোণ কোষ (cone cells), আলোকে ধারণ করে এবং আপনাকে রঙিন এবং তীক্ষ্ণ দৃশ্য দেখাতে সাহায্য করে। কিন্তু অন্ধকারে যখন আলো কমে যায়, তখন রড কোষ (rod cells) নামক অন্য এক ধরনের কোষ সক্রিয় হয়ে ওঠে, যা কম আলোতে দেখতে সহায়তা করে।


যদি আপনি হঠাৎ করে আলো থেকে অন্ধকারে চলে আসেন, আপনার রড কোষগুলো সম্পূর্ণ কার্যকর হতে কিছুটা সময় নেয়। এটি কয়েক সেকেন্ড থেকে কয়েক মিনিট পর্যন্ত হতে পারে, নির্ভর করে আলো এবং অন্ধকারের তীব্রতার পার্থক্যের ওপর। কিন্তু যদি আপনি একটি চোখকে আলো থেকে বাঁচিয়ে রাখেন, যেমন আই প্যাচ ব্যবহার করে, তাহলে সেই চোখের রড কোষগুলো অন্ধকারের জন্য প্রস্তুত থাকে এবং দ্রুতই অন্ধকারের সাথে খাপ খাওয়াতে পারে।


ডাকাতরা এবং নাবিকরা এই সহজ অথচ কার্যকরী কৌশলটি ব্যবহার করতেন যাতে অন্ধকারে হঠাৎ প্রবেশ করার পরও তাদের দৃষ্টিশক্তি কার্যকর থাকে। এই পদ্ধতিটি তাদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কারণ অন্ধকারে তাদের কাজ করতে হতো যেখানে তীক্ষ্ণ দৃষ্টির প্রয়োজন ছিল।


এই কৌশলের আরও একটি চমকপ্রদ দিক হলো, এটি মানব শরীরের অভিযোজন এবং প্রতিক্রিয়া সক্ষমতার একটি প্রাকৃতিক উদাহরণ। এটি আমাদের দেখায় যে, আমাদের শরীর পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে কীভাবে নিজেদের প্রস্তুত করে নেয়। আধুনিক সময়ে যদিও এই কৌশলটির ব্যবহার কমে গেছে, তবুও এটি মানুষের উদ্ভাবনশীলতা এবং প্রাকৃতিক ক্ষমতার একটি দৃষ্টান্ত।


বর্তমানে, যদিও আমাদের কাছে অনেক উন্নত প্রযুক্তি রয়েছে যেমন নাইট ভিশন গগলস বা ইনফ্রারেড ক্যামেরা, যা অন্ধকারে দেখতে সাহায্য করে, তবুও প্রাচীন এই কৌশলটি একটি অনন্য এবং প্রাকৃতিক সমাধান হিসেবে রয়ে গেছে। এটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, প্রয়োজন অনুসারে আমাদের দেহ কীভাবে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিতে পারে।


অতীতে ডাকাতদের জন্য একটি প্রয়োজনীয় কৌশল হলেও, আজকের যুগে এটি একটি আকর্ষণীয় এবং শিক্ষণীয় ঘটনা হিসেবে রয়ে গেছে, যা মানুষের দেহের অদ্ভুত এবং জটিল ক্ষমতাকে প্রতিফলিত করে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url