জন্মের পরই নবজাতক কেন কেঁদে ওঠে?

নবজাতকের জন্মের পরই কান্না শোনার দৃশ্যটি স্বাভাবিক ও সুস্থ একটি প্রতিক্রিয়া। কিন্তু কেন এই কান্না? এর পেছনে কিছু বৈজ্ঞানিক কারণ রয়েছে।


১. শ্বাস-প্রশ্বাসের শুরু:

জন্মের পূর্বে গর্ভের ভেতরে নবজাতকটি মায়ের প্লাসেন্টার মাধ্যমে অক্সিজেন পায় এবং সেই সময় তার ফুসফুস কার্যকর হয় না। কিন্তু জন্মের পরই তার শ্বাস-প্রশ্বাস নিজেই করতে হয়, যার ফলে প্রথমে তার ফুসফুসে বাতাস ঢোকে। এই প্রথম শ্বাস গ্রহণের প্রচেষ্টাতেই নবজাতক কেঁদে ওঠে। কান্নার সঙ্গে সঙ্গে তার ফুসফুস পুরোপুরি প্রসারিত হয় এবং স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়।


২. রক্তসঞ্চালনের পরিবর্তন:

জন্মের পরপরই নবজাতকের শরীরে রক্তসঞ্চালনের প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন ঘটে। গর্ভের ভেতরে থাকাকালীন, তার শরীরে রক্তসঞ্চালনের ব্যবস্থা ভিন্ন ছিল, যা জন্মের পরপরই পরিবর্তিত হয়। এই পরিবর্তন শরীরে অক্সিজেনের প্রবাহ বজায় রাখতে সহায়তা করে এবং সেই পরিবর্তনের চাপেই নবজাতক কেঁদে ওঠে।


৩. তাপমাত্রার পার্থক্য:

গর্ভের ভেতরের উষ্ণ ও সুরক্ষিত পরিবেশ থেকে বেরিয়ে এসে বাইরের ঠাণ্ডা পরিবেশে এসে নবজাতক এক ধরনের শারীরিক শক অনুভব করে। এই পার্থক্যের কারণেও সে কেঁদে ওঠে। কান্নার মাধ্যমে শরীরে রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি পায়, যা তাকে নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে সাহায্য করে।


৪. স্নায়ুতন্ত্রের প্রতিক্রিয়া:

নবজাতকের স্নায়ুতন্ত্রও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জন্মের পরপরই শরীরে প্রচণ্ড সংবেদনশীলতা কাজ করে, যা তাকে কান্না করতে বাধ্য করে। এটি তার নতুন পরিবেশে মানিয়ে নেওয়ার একটি প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া।


৫. শারীরিক অবস্থার সংকেত:

কান্না, নবজাতকের শারীরিক অবস্থার একটি সংকেতও হতে পারে। জন্মের পরপরই কান্না না করলে, চিকিৎসকরা শিশুর শারীরিক অবস্থার উপর নজর দেন, কারণ এটি কোনো শারীরিক সমস্যা নির্দেশ করতে পারে।


৬. বেঁচে থাকার প্রাথমিক চাহিদা:

কান্না, নবজাতকের জন্য একটি প্রাথমিক যোগাযোগ মাধ্যম। এটি তাকে খাদ্য, স্নেহ এবং সুরক্ষার প্রয়োজনের কথা জানানোর একটি উপায়। 


জন্মের পরই নবজাতকের কান্না প্রাকৃতিক, স্বাস্থ্যকর এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রক্রিয়া। এটি তাকে নতুন পৃথিবীর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার প্রাথমিক পদক্ষেপ। এই কান্নার মাধ্যমে নবজাতক তার শ্বাস-প্রশ্বাস শুরু করে, তার শরীরের পরিবর্তিত অবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য করে এবং তার বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয়তা পূরণ করে।


জন্মের পর নবজাতকের কান্না একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। এটি তার সুস্থতার অন্যতম প্রাথমিক চিহ্ন। মায়ের গর্ভ থেকে আলাদা হওয়ার পর, নবজাতকের ফুসফুস ও হার্টের সঠিক কার্যকারিতা যাচাই করার জন্য এই কান্না জরুরি।


জন্মের আগে নবজাতক মায়ের দেহের সঙ্গে সংযুক্ত আম্বিলিক্যাল কর্ড বা নাভিরজ্জুর মাধ্যমে অক্সিজেন পায় এবং শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। তবে জন্মের পরপরই, শিশুটিকে নিজেই শ্বাস নিতে হয়। যখন নবজাতক গর্ভের বাইরে আসে, তখন শরীরের বিভিন্ন ফ্লুইড বা তরল পদার্থ শ্বাস-প্রশ্বাসের পথটি আংশিকভাবে আটকে দিতে পারে। এই অবস্থায়, শ্বাসের পথ খুলতে নবজাতক কেঁদে ওঠে। এই কান্নার সঙ্গে সঙ্গে ফুসফুসে বাতাস প্রবেশ করে এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের পথ পরিষ্কার হয়। ফলে নবজাতক সহজেই শ্বাস নিতে পারে।


নবজাতকের জন্মের পরপরই কান্না করার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায় যে তার ফুসফুস সঠিকভাবে কাজ করছে এবং শরীরে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ হচ্ছে। যদি নবজাতক কান্না না করে, তবে শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যার সম্ভাবনা থাকতে পারে, যা তৎক্ষণাৎ চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। সুতরাং, এই কান্না নবজাতকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তার সুস্থতার অন্যতম সূচক।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url