দিনে কত ঘন্টা ঘুমানো উচিত? বয়স অনুযায়ী ঘুমের তালিকা।

ঘুম আমাদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঠিক মতো ঘুম না হলে আমাদের শরীর ও মনের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে। তবে, দিনের কত ঘন্টা ঘুমানো উচিত, এটি বয়স, জীবনযাত্রা এবং অন্যান্য বেশ কিছু বিষয়ের উপর নির্ভর করে।


বয়স অনুসারে ঘুমের প্রয়োজনীয়তা:

ঘুমের প্রয়োজনীয়তা বয়সের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়। ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশন-এর তথ্য অনুযায়ী বয়স অনুসারে ঘুমের সুপারিশ করা হয়েছে নিম্নরূপ:


  • নবজাতক (০-৩ মাস): ১৪-১৭ ঘন্টা
  • শিশু (৪-১১ মাস): ১২-১৫ ঘন্টা
  • টডলার (১-২ বছর): ১১-১৪ ঘন্টা
  • প্রি-স্কুলার (৩-৫ বছর): ১০-১৩ ঘন্টা
  • স্কুলে যাওয়া শিশু (৬-১৩ বছর): ৯-১১ ঘন্টা
  • কিশোর (১৪-১৭ বছর): ৮-১০ ঘন্টা
  • তরুণ (১৮-২৫ বছর): ৭-৯ ঘন্টা
  • প্রাপ্তবয়স্ক (২৬-৬৪ বছর): ৭-৯ ঘন্টা
  • বয়স্ক (৬৫+ বছর): ৭-৮ ঘন্টা


কেন পর্যাপ্ত ঘুম গুরুত্বপূর্ণ?

পর্যাপ্ত ঘুম আমাদের শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে সহায়তা করে। ঘুম আমাদের মনোযোগ, স্মৃতিশক্তি এবং শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করে। এছাড়াও, পর্যাপ্ত ঘুম ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে এবং হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখে। 


কম ঘুমের ক্ষতিকর প্রভাব:

যারা পর্যাপ্ত ঘুমান না, তাদের মধ্যে নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়া, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হওয়া, স্থূলতা, ডায়াবেটিস, হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি, এবং হতাশা ও উদ্বেগের সমস্যা দেখা দিতে পারে।


সঠিক ঘুমের জন্য টিপস:

  • প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং ঘুম থেকে ওঠা।
  • শোবার আগে ভারী খাবার এবং ক্যাফেইন পরিহার করা।
  • ঘুমানোর স্থানকে শান্ত ও অন্ধকার রাখা।
  • নিয়মিত ব্যায়াম করা, তবে ঘুমের আগে ভারী ব্যায়াম এড়িয়ে চলা।

:

সঠিক পরিমাণে ঘুমানো আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য অংশ। বয়স অনুযায়ী ঘুমের প্রয়োজনীয়তা মেনে চলা এবং সুস্থ থাকার জন্য পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা উচিত। যদি আপনি ঘুমের সমস্যায় ভুগছেন, তাহলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরি।

ঘুমান এবং সুস্থ থাকুন!


৬ ঘন্টা ঘুম কি যথেষ্ট?

৬ ঘন্টা ঘুম অনেকের জন্য পর্যাপ্ত হতে পারে, তবে বেশিরভাগ প্রাপ্তবয়স্কের জন্য এটি সাধারণত যথেষ্ট নয়। সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রতিদিন ৭-৯ ঘন্টা ঘুমানো সুপারিশ করা হয়। 


যদি কেউ নিয়মিত ৬ ঘন্টা ঘুমিয়ে সতেজ এবং সক্রিয় বোধ করেন, তবে তাদের জন্য এটি কাজ করতে পারে। কিন্তু অনেকেই ৬ ঘন্টা ঘুমের ফলে দিনব্যাপী ক্লান্তি, মনোযোগের অভাব, এবং কর্মক্ষমতায় হ্রাসের মতো সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন।


তবে, দীর্ঘমেয়াদে ৬ ঘন্টা ঘুম নেওয়া স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে, যেমন:


  • মনোযোগের অভাব: ঘুমের অভাবে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমে যায়, যা দৈনন্দিন কাজকর্মে প্রভাব ফেলতে পারে।
  • শারীরিক দুর্বলতা: পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে শরীর দুর্বল হয়ে যেতে পারে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে।
  • মানসিক স্বাস্থ্য: ঘুম কম হলে হতাশা ও উদ্বেগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
  • দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সমস্যা: স্থূলতা, ডায়াবেটিস, হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে।


প্রতিটি মানুষের ঘুমের প্রয়োজনীয়তা ভিন্ন হতে পারে, তবে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য ৭-৯ ঘন্টা ঘুমানোর চেষ্টা করা উচিত। যদি আপনি দীর্ঘ সময় ধরে ৬ ঘন্টা বা তার কম ঘুমান এবং এর ফলে শারীরিক বা মানসিক কোনো সমস্যা অনুভব করেন, তবে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।


দুপুরে ঘুমানো, যাকে আমরা 'পাওয়ার ন্যাপ' বলি, এটি শরীর এবং মনকে তরতাজা করতে সহায়ক। সাধারণত ২০-৩০ মিনিটের ঘুমই দুপুরের জন্য যথেষ্ট এবং এটি মনোযোগ ও কর্মক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। 


যদি ৩০ মিনিটের বেশি ঘুমান, তবে ঘুমের গভীর পর্যায়ে পৌঁছে গেলে উঠে একটু ঝিমুনি বা ক্লান্তি লাগতে পারে। যারা গভীর ঘুমের অভ্যাস আছে তাদের জন্য ৯০ মিনিটের একটি সম্পূর্ণ সাইকেলও উপকারী হতে পারে, তবে তা নিয়মিত হওয়া উচিত।


উপকারিতা:

  • শক্তি বৃদ্ধি: কম সময়ের মধ্যেই শরীরের শক্তি পুনরুদ্ধার হয়।
  • মানসিক সতেজতা: মনোযোগ এবং সৃজনশীলতা বাড়ে।
  • মানসিক স্বাস্থ্য: স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। 


তবে দুপুরে ঘুমের সময় সন্ধ্যা পর্যন্ত গড়ালে রাতে ঘুমের সমস্যা হতে পারে, তাই সঠিক সময় মেনে চলা গুরুত্বপূর্ণ।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url